১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখিনি তবে ২৫শে মার্চের কাল রাতের কথা বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, বই পুস্তক এবং মুরুব্বীদের মুখে শুনেছি। বিনা কারণে পাক হানাদার বাহিনী বাংলাদেশের নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বাঙালির অধিকার খর্ব করা পাকিস্তানি বাহিনী এবং তার দোসররা কত হাজার হাজার মা-বোনের ইজ্জত নষ্ট করেছে তার সঠিক সংখ্যা আজও অজানা। কত বুদ্ধিজীবী, কবি, সাংবাদিক, ডাক্তার, লেখক কে জীবন দিতে হয়েছে তারও সঠিক সংখ্যা অজানা।
পুরনো ইতিহাস কখনো ভুলে থাকার নয় ভুলে যাবার নয়। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ আর অন্যায় অত্যাচার সহ্য করে এদেশের দামাল ছেলেরা স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনে। আমরা একটা বর্ণিল স্বাধীনতা এবং লাল সবুজের পতাকা ফিরে পাই। স্বাধীনতা পেলেও আমরা স্বাধীন হতে পারিনি, দেশীয় শোষক আর স্বৈরাচারের হাত থেকে। স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রীয় মদদে গুম, খুন, ডাকাতি, ব্যাংক লুট, নারী ধর্ষণ সবই হয়েছে নিয়মিত। মূলত শাসক দলই এসবের সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে ধীরে ধীরে দেশে স্বৈরাচারের বীজ বপন হতে থাকে। মায়া কান্না করে তসবি টিপে কেউ কেউ ক্ষমতায় গেলও ক্ষমতায় গিয়ে জনগণের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন আনতে পারেনি।ক্ষমতা লোভী গোষ্ঠী জনগণকে জিম্মি করে যা ইচ্ছে তাই করেছেন। তাইতো দীর্ঘ ১৭ বছর দেশ শাসন করেও দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এরা সংসদ কে বানিয়ে ছিলেন মাছের বাজার,গানের মঞ্চ, গৃহ পালিত বিরোধীদলকে পুতুল বানিয়ে রেখেছিলেন বসিয়ে। আইন পাশ করা জনগণের ট্যাক্সের টাকায় নির্মিত সংসদ জনগণের কোন কাজে আসে নাই বরং সেখানে বসে জনগণকে কিভাবে ধ্বংস করা যায় সেই নেশায় মেতে ছিলেন তারা। সংসদে বসে জনগণকে কিভাবে অন্যায় অত্যাচার করে দমিয়ে রাখা যায় তারই নীল নকশা তৈরি করেন তারা।
১৭ বছরে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধি, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে হরিলুট,শিক্ষা খাতে কমিশন বাণিজ্য, চাকরির ক্ষেত্রে বিশেষ কোটা, প্রশাসনে ঘুষ বাণিজ্য। শিল্প ক্ষেত্রে শ্রমিক অসন্তোষ এবং দেশীয় শিল্প বিদেশীদের হাতে তুলে দেওয়া। রাজনীতিকে করেছেন ব্যবসায়ী তন্ত্র ও আমলাতন্ত্র। চিকিৎসা সেবায় দানবের স্টিম রোলার চালিয়েছেন তারা। জনগণের সকল অধিকার খর্ব করে ভোটের নাটক সাজিয়ে বার বার ক্ষমতায় গিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট করে বিদেশে পাচার করেছেন। বিদেশে বানিয়েছেন গাড়ি বাড়ি। বাড়ির দারোয়ান পিয়ন থেকে শুরু করে সকল স্তরের নেতাকর্মীদের বিপুল পরিমাণ অর্থ যোগান দিয়েছেন সরকার যার ফলে নেতা কর্মীরা বেপরোয়া হয়ে অবৈধ টাকার পাহাড় বানিয়ে ফেলেছেন।
ফিরে আসে ২০২৪ এর ভয়াবহ ৫ ই আগস্ট ছাত্র জনতা রোশনালে পরে স্বৈরাচারী সরকার ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এটা অনেক আগেই হতে পারতো। বিগত ৩ টি নির্বাচন যেভাবে ভোটার বিহীন অবস্থায় হয়েছে তার প্রধান নীল নকশাকারী সাবেক ৩ জন অথর্ব নির্বাচন কমিশনার, সাবেক আমলা,পুলিশ ও র্যাব প্রধান দায় এড়াতে পারেন না,আর এসবের পুরোপুরি দায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
বিএনপি’র হাই কমান্ডের কঠোর নির্দেশ থাকলেও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা কর্মীরা দায় সারা বক্তব্য এবং সাংগঠনিক দুর্বলতার সুযোগ কাজে লাগিয়ে জনগণের চোখে ধুলো দিয়ে উন্নয়নের স্লোগান দিয়ে স্বৈরাচার গদি পাকাপোক্ত করে। বারবার ছাত্র-জনতা মাঠে নামার চেষ্টা করলেও শাসক দলের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে তা গতি ফিরে পাইনি।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান – তারেক রহমান বিদেশে অবস্থান করায় এবং দেশে ফিরতে না পারায় বিলম্ব হয় স্বৈরাচার পথন আন্দোলন তবে তারেক রহমানের ইচ্ছার কোন কমতি ছিল না স্বৈরাচার পতনে। তারেক রহমানের সুদক্ষ নেতৃত্বে অনেক আগেই স্বৈরাচার পতনের ঘন্টা অপেক্ষা করছিল কিন্তু তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশে অবস্থানরত বিএনপি’র দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা। কেউ কেউ মাঠে সক্রিয় থাকলেও আত্মগোপনে ছিল বেশির ভাগ নেতা কর্মীরা, তাইতো ২০২৪ পর্যন্ত১৭ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে পুনঃ স্বাধীনতার জন্য দেশের নিরীহ জনগণকে। এরপর ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর গঠিত হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, সেখানেও সর্ষের মধ্যেই ভূত ঢুকে গেছে। সংস্কারের ধোয়া তুলে নির্বাচন বিলম্বের পায়তারা করা হচ্ছে। এদিকে পলাতক স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা পিছন থেকে বিভিন্ন অপকর্মের কলকাঠি নাড়ছে। দেশটা যাতে ঘুরে দাঁড়াতে না পারে। কিন্তু সাধারণ জনগণ ভাবছে অন্য কথা। দ্রুত নির্বাচন না দিলে কোনভাবেই ব্যবসা-বাণিজ্য বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানো সম্ভব নয়। রক্ষক ভক্ষক না হয়ে জরুরি আগামী আগস্ট সেপ্টেম্বরের ২০২৫ এর মধ্যে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া অত্যান্ত জরুরি।
গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করে নির্বাচন না দিলে আবার ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে দেশ কারন বহিঃ শক্তি ভারত সহ কিছু দেশ বাংলাদেশের ভালো দেখতে চান না। আমাদের কাজ আমাদেরই করতে হবে এটা ভেবে সকলের সাথে পরামর্শ করে একটা ভালো নির্বাচন উপহার দিলেই বড় ধরনের ক্ষতির থেকে রক্ষা পাবে বাংলাদেশ।
Leave a Reply